স্বার্থপরতা ও সম্পর্কের মুল্যায়ন দুটি জটিল সমীকরণ!

স্বার্থপরতা ও সম্পর্কের মুল্যায়ন দুটি জটিল সমীকরণ!

স্বার্থপরতা   এবং সম্পর্কের মুল্যায়ন পরস্পর সম্পর্কযুক্ত একটি অর্থবহ বাক্য। আসলে এর অর্থ বড় কঠিন ও ব্যাপক। বর্তমানে আধুনিক যুগে সম্পর্ক শব্দটি বড় ভঙ্গুর। আজকাল সম্পর্ক তৈরী হতে যেমন সময় লাগে না তেমনি ভাঙ্গতেও সময় লাগে না। মাঝে মাঝে এমন মনে হয়, এসব সম্পর্ক নই, শুধুই স্বার্থপরতা। এমন মনে হবার পেছনে যুক্তিসঙ্গত কারণ তো অবশ্যই আছে। সম্পর্ক যেন এক বহুরূপী অনুভূতি। এখানে ছোট, বড়, ধনী গরীব, জাতি, ধর্ম, বর্ণ, গোত্র, সমাজ সংস্কার ইত্যাদি প্রধান ও বিবেচ্য বিষয় নই। আত্মা দিয়ে পরস্পরকে অনুভব এবং বুঝতে পারার মধ্য দিয়ে সম্পর্কের বন্ধন মজবুত হয়। সম্পর্ক বিভিন্ন প্রকারে হতে পারে।

স্বার্থপরতা ও সম্পর্কের মুল্যায়ন দুটি জটিল সমীকরণ!

আইন, ধর্ম, সমাজ, পরিবার এবং রীতি নীতিগত ভাবে স্বীকৃত সম্পর্ক হলো বিয়ে। এ ক্ষেত্রে পারস্পারিক জানা শোনা এবং বোঝার বিষয়টি প্রাচীনকাল থেকে মেনে চলা হয় না। এখনকার দিনে অবশ্য জানা শোনার বিষয়টিকে মুল্য দেয়া হচ্ছে। বিয়ের পুর্বেই এখন ছেলে-মেয়ে বা বর-কনেকে একান্তে কথা বলার সুযোগ করে দেয়া হয়। যেন পরস্পরের মন মানসিকতাকে কিছুটা হলেও বুঝতে পারে। পরবর্তীতে বৈবাহিক জীবনে পরিবারের দায় এড়ানো এর মুল লক্ষ্য। ধর্মের নামে কঠোর রক্ষণশীলতা মাঝে মাঝে এ ক্ষেত্রে স্বার্থপরতা দেখিয়ে বাঁধা দেয়। আমাদের মধ্যে স্বার্থপরতা থাকলেও সম্পর্কের ক্ষেত্রে সকলেই আজকাল এমন মেলামেশাতে বেশ নমনীয়। তবে এ চেনা জানার বিষয়টি একটি সীমাবদ্ধ পর্যায়ে থাকা উচিত।

স্বার্থপরতা ও সম্পর্কের মুল্যায়ন দুটি জটিল সমীকরণ!

কাজ, এক জায়গায় বাড়ী বা পরিবেশের কারণেও সম্পর্ক গড়ে ওঠে। যা শ্রদ্ধা, বন্ধুত্ব, সমবেদনা এবং সহানুভূতির ঊদাহরণ হয়ে থাকে। সব চেয়ে মজার বিষয় হলো এমন সম্পর্ককে আমরা আত্মীয় স্বজন বা সমালোচকরা বাঁকা চোখে দেখি। এর জন্য আমাদের নীচু মানসিকতা বা হীনমন্যতা বেশী দায়ী। কুসংস্কার এবং স্বার্থপরতা এ ক্ষেত্রে সহায়ক। সম্পর্কে সন্দেহ, অবিশ্বাস এবং স্বার্থপরতা থাকলে পারস্পারিক অশান্তি সৃষ্টি হয়। আশ্চর্য মনে হলেও শর্ষে ফুলে ভূত আছে। আমরা বেশীর ভাগ লোকই একটি সুন্দর সম্পর্ককে বাঁকা চোখে দেখি। তাই সন্দেহের কারণে আমাদের পারিবারিক এবং সাংসারিক অশান্তি সৃষ্টি হয়। সন্দেহ করা সকল পারিবারিক সমস্যার মুল কারণ। যে কোন সম্পর্ককে ভালো ভাবে না জেনে অনুমানের ভিত্তিতে মুল্যায়ন করা ঠিক নই।

স্বার্থপরতা ও সম্পর্কের মুল্যায়ন দুটি জটিল সমীকরণ!

স্বামী এবং স্ত্রীর মধ্যে বিবাহ পরবর্তী জীবনে পারস্পারিক বোঝা শোনা গভীর হয়। সম্পর্কটি এক সময় বন্ধুত্বের পর্যায়ে যেতে পারে। এমন সম্পর্ক বরাবরই সুন্দর এবং প্রশংসার দাবী রাখে। এতে পরস্পর বোঝা শোনা সহজ হয়। পাশাপাশি পারস্পারিক আস্থা, বিশ্বাস এবং নির্ভরশীলতার ভিত মজবুত হয়। ফলে পরবর্তীতে দাম্পত্য জীবন খুব সুন্দর হয়। অনেকে মনে করেন সম্পর্কের বা ভাব বিনিময় পর্বটা বিয়ের পরে হওয়া উচিত। ফলে বৈবাহিক জীবনে স্বার্থপরতা কমে যায়। এমন ইচ্ছা প্রসংশার দাবী রাখে। তবে বন্ধুত্বের সাথে সাথে পারস্পারিক মুল্যায়ন, শ্রদ্ধা এবং সম্মানবোধ ঠিক রাখতে হবে। স্বার্থপরতা যেন কোন সম্পর্ককে নষ্ট না করে সে দিকেও সচেতন থাকতে হবে।

স্বার্থপরতা ও সম্পর্কের মুল্যায়ন দুটি জটিল সমীকরণ!

বর্তমানে স্কুল কলেজগামী ছেলে মেয়েদের মধ্যে বন্ধুত্বের ছদ্ববেশে এক ধরণের সম্পর্ক বিস্তার লাভ করেছে। যার মধ্যে শুধুমাত্র নোংরামী, অনৈতিক দৈহিক সম্পর্ক এবং স্বার্থপরতা দেখা যায়। ব্লাকমেইল, খুন, ধর্ষণ ইত্যাদি অপরাধ সৃষ্টিতে এমন সম্পর্ক সহায়ক। তবে বর্তমানে ছেলে মেয়ের মাঝে যে ভালো সম্পর্ক একেবারে নেই, তা নই! এমন সম্পর্ক এত কম যে, উল্লেখ করার মত নই। বর্তমানে উঠতি বয়সের ছেলে মেয়েরা তথ্য প্রযুক্তির অবাধ ব্যবহারের ফলে সহজেই এমন সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ছে। এ ধরনের সম্পর্কের ক্ষেত্রে সব সময়ই অর্থের লোভ, দৈহিক লালসা চরিতার্থের ইচ্ছা প্রাধান্য পায়। এমন সম্পর্ক পারিবারিক এবং সামাজিক অশান্তি সৃষ্টিতে অত্যন্ত সহায়ক ভূমিকা রাখে।

স্বার্থপরতা ও সম্পর্কের মুল্যায়ন দুটি জটিল সমীকরণ!

আজকাল সম্পর্কের মধ্যে স্বার্থপরতা বেশী কাজ করে। হাতে গোণা দু একটি সম্পর্ক ভালো বলা চলে। বাকী সব সম্পর্কই বেশী স্বার্থপরতা যুক্ত। সব সম্পর্কে কম বেশী স্বার্থপরতা আছে। সম্পর্কে লোভ এবং স্বার্থপরতা বেশী হলে, সম্পর্ক টেকে না। হাল ফ্যাশানের সম্পর্ক গুলো বর্তমানে স্বার্থ ও লোভের প্রতীক। প্রত্যেকেই আজকাল কোন এক বিশেষ লাভের আশায় সম্পর্কে জড়ায়। এটা হতে পারে অর্থ সম্পদ হস্তগত করার প্রক্রিয়া। হিংসা অথবা অন্যকোন লোভের পরিকল্পনা। অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও দৈহিক ভোগের কামনা বর্তমান সম্পর্কে নিবিড় ভাবে জড়িয়ে আছে। স্বার্থ, লোভ এবং লাভ দেখে বর্তমানে সবাই সম্পর্ক গড়ায় যা সরাসরি স্বার্থপরতা কে নির্দেশ করে।

স্বার্থপরতা ও সম্পর্কের মুল্যায়ন দুটি জটিল সমীকরণ!

তথ্য প্রযুক্তির ব্যাপক প্রচার, প্রসার গোটা বিশ্বকে আমাদের হাতে এনে দিয়েছে। এ কথা যেমন সত্য তেমন এর সুফল এবং কুফলও আছে। দেশে কঠিন নজরদারি এবং আইন করা হলেও বিকল্প উপায়ে হর হামেশা এ প্রযুক্তির অপব্যবহার হচ্ছে। আগে একটা সময় ছিল যেখানে দৈহিক কামনা বাসনা অনুভবের ক্ষেত্রে বয়সের একটা সীমারেখা ছিল। বর্তমানে এর কোন নির্দিষ্ট সীমা নেই বললে চলে। এখন বালক থেকে সবে মাত্র কিশোরে পা দিয়েছে এমন সবাই জানে যৌনতা বা দৈহিক লালসা কাকে বলে। এর পিছনে অবশ্য শিক্ষা ব্যবস্থার প্রসারের অবদানও আছে। শারিরীক শিক্ষা পাঠ্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত হবার ফলে এ বিষয়ে জানার যথেষ্ট সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।

স্বার্থপরতা ও সম্পর্কের মুল্যায়ন দুটি জটিল সমীকরণ!

বিভিন্ন দেশের খারাপ রীতি নীতি, সংস্কৃতির নামে নগ্নতা ইত্যাদি আজ ইন্টারনেটের বদৌলতে সবার হাতের মুঠোয়। আজকাল কলেজ এবং স্কুলের উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণীর ছেলে মেয়েরা সম্পর্কের অনৈতিকতায় এগিয়ে আছে। বিশেষ করে বয় ফ্রেন্ড বা বন্ধুত্বের নামে অথবা প্রেম ভালোবাসার মুখোশ পড়ে হর হামেশা এক ধরণের অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ছে। এমন সম্পর্কে সাধারণত মেয়েদের লোভ থাকে টাকা পয়সা বা এ জাতীয় আরো লোভনীয় কিছুর দিকে। আর ছেলেরা এ সুযোগে তাদের লোভ এবং কামনার লোলুপ দৃষ্টি দেয় মেয়েদের শরীরের দিকে। এমন সম্পর্কের মধ্যে, গিভ এন্ড টেক, শব্দের আড়ালে চলে জঘণ্য নোংরামীর খেলা। এ স্পষ্ট এবং বাস্তব সত্য অস্বীকার করার উপায় নাই।

স্বার্থপরতা যে সম্পর্ককে বিতর্কিত করে এ কথা যেমন ঠিক। তেমনি স্বার্থপরতা দেখানো ও শিক্ষায় আমার দায়ী। আমরা বড়রা সম্পর্কের ক্ষেত্রে এমন স্বার্থপরতা দেখাই, যা দেখে ছোটরা শিখছে। এ ভাবে সম্পর্কের ক্ষেত্রে আমরা আস্তে আস্তে অবণতির দিকে চলে যাচ্ছি। কথায় আছে, আগের হাল যেমন যায়, পিছনের হালও তেমনই যায়! আমাদের অবস্থাও ঠিক সে রকম। আমরা যদি না শেখাই তবে অন্যরা স্বার্থপরতা শিখবে না। আপনি হয়তো এ কথায় আশ্চর্য হচ্ছেন, তাই না! ধরি আমরা দুই ভাই, বাবার বৃদ্ধ বয়সে অসুস্থতায় আমি একটু বেশী সেবা যত্ন ও দায়িত্ব পালন করেছি। পরে আমার প্রতি বাবার অধিক সহানুভূতিকে কাজে লাগিয়ে আমি ঠিকই স্বার্থ হাসিল করি!

আজ অজুহাত দিয়ে আমি আমার ভাইকে ঠকিয়ে বাবার কাছ থেকে কিছু জমি বা সম্পত্তি নিজের বা সন্তানের নামে দলিল করে নিলাম। পরে ভাগ বাটোয়ারায় যে সমান অংশ পাবো সেটাও নিলাম। আজকাল অনেক পরিবারেই এ চিত্র বেশ দেখা যায়। এটাকে সকলে স্বার্থপরতা না বলে নিশ্চয় চাঁদে যাওয়া বলবেন না! এটা কি স্বার্থপরতা নই? এই একই চিত্র কিন্তু আমার ছেলেরা আমায় দেখে শিখছে। ভবিষ্যতে নিশ্চিত তাদের ভাগের বেলায় তারাও ঠিক এমনই করবে।

সবচেয়ে বড় কথা হলো স্বার্থপরতা যুক্ত মানুষ সম্পর্ককে মুল্যায়ন করে না। মুল্যায়ন করে তার নিজের প্রয়োজনীয়তা ও চাহিদাকে। তারা সময়ের প্রয়োজনে আপনাকে ব্যবহার করে মাত্র। তাদের স্বার্থপরতা এবং চাহিদা শেষে আপনার কাছ থেকে অবলীলায় কেটে পরবে। এমন বাস্তবতায় আপনার অবস্থা কেমন হবে। বা কোন পরিস্থিতিতে পড়বেন সে অবস্থা তার কাছে কোন বিবেচনার বিষয় নই। এমন স্বার্থপর মানুষের সাথে সম্পর্কে জড়ানো আর উলু বনে মুক্তা ছড়ানো একই কথা। সুতরাং সম্পর্কে জড়ানোর পুর্বে ভাল মন্দ, আগ পিছ সব ভেবেই সম্পর্কে জড়াবেন। যাতে সম্পর্কটা স্বার্থপরতা পুর্ণ ঠুনকো সম্পর্ক হয়ে না যায়!

Leave a Reply