এক জীবনের এতো প্রাচুর্য অন্ত্যহীন যাত্রা ঠেকাবে কি!

এক জীবন, প্রাচুর্যের সমারোহ এবং অন্ত্যহীন যাত্রা।

এক জীবনের জন্য আমাদের প্রচুর সম্পদ এবং প্রাচুর্য থাকার পরও আমরা মৃত্যুকে ঠেকাতে পারি না। তারপরও অজানা মোহে আমরা সম্পদের পেছনে ছুটছি। এই যে, ছুটে চলা তার কিন্তু কোন শেষ নেই। কারণ চাহিদার এই মোহটি অসীম। তাই একটি চাহিদার পর আর একটি চাহিদা ধারাবাহিক ভাবে আসতে থাকে। একটি চাহিদা শেষ হবার আগেই আর একটি চাহিদা স্বাভাবিক ভাবে চলে আসে। তা যদি সেই সময়ের জন্য অতি প্রয়োজনীয় হয়। তবে হাজারো চেষ্টা করে তাকে এড়ানো সম্ভব না। এ ভাবে আমরা প্রয়োজনের তাগিদে সম্পদ গড়ার প্রতিযোগীতায় নেমে পড়ি। আসলে এতো সব অর্থ সম্পদ আমাদের মৃত্যু ঠেকাতে পারে না।

এক জীবন, প্রাচুর্যের সমারোহ এবং অন্ত্যহীন যাত্রা।

এক নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের একজন বালকের কথা ভাবুন। আজ হতে ত্রিশ বা পঁয়ত্রিশ বছর আগে যখন সে শিশু ছিল। তখন তার চাহিদা ছিল শুধু মাত্র সামান্যকে ঘিরে। সে কোন স্বচ্ছল পরিবারের কোন এক সন্তানের ইংলিশ হাফ প্যান্ট পড়া দেখতো। কল্পনায় নিজেকে তেমনটি ভাবতো। ভাবতো, ইস্ এমন একটি প্যান্ট যদি আমি পড়তে পারতাম। হয়তো অস্বচ্ছল গরীব বাবার কাছে প্যান্টের জন্য বায়না ধরত। এক বছর ধরে চাওয়ায় এই রকম একটা প্যান্ট তার কপালে জুটল। এই একটা প্যান্ট তাকে পড়াতে গিয়ে তার পরিবারকে কত যে ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে। তার শিশু মন কিন্তু সেটা বুঝতে পারেনি।

এক জীবন, প্রাচুর্যের সমারোহ এবং অন্ত্যহীন যাত্রা।

ত্রিশ বা পঁয়ত্রিশ বছর পর কালের আবর্তনে সেই শিশুটি এক সময় বড় হয়ে তার সংসারের হাল ধরেছে। সংসারের কঠিন দায়িত্ব কাঁধে নেবার সময় তার দু চোখে স্বপ্ন ছিল অন্যl রকম। তার কল্পনায় ছোট্ট দুটি ঘর, রান্না ঘর, দক্ষিণা খোলা জানালা, এক চিলতে উঠোন, বাথরুম, টয়লেটসহ সুন্দর ছিমছাম পরিবার। এমনটা ভাবলেই মনটা কেমন যেন, পুলকিত হয়ে যেত। ধরুন, বর্তমানে সেই শিশুটি চেষ্টা ও কর্ম গুণে দরিদ্রতার সীমা কাটিয়ে এখন মধ্যবিত্ত পরিবারের সদস্য। এখন তার দু চোখে একটি ফ্লাট বাড়ীর রঙ্গীন স্বপ্ন। তার মানে সময়ের প্রয়োজনে আমাদের চাহিদা আস্তে আস্তে বাড়তে থাকে, যা সীমাহীন।

সব ধর্মই বর্তমান জীবন নিয়ে স্ব স্ব অবস্থানে সরব। উত্থান-পতন, আখিরাত বা পুনর্জন্ম বিষয়গুলো সম্পুর্ণ ভাবেই ধর্মীয় এবং আধ্যাত্মিক বিষয়। আমাদের সকল জাগতিক চাওয়া পাওয়া নিতান্তই এক জীবনকে ঘিরে। স্বাচ্ছন্দ এবং সুন্দর ভাবে জীবন যাপনের জন্য প্রচুর অর্থ, সম্পদ ও প্রাচুর্যের আসলে প্রয়োজনীয়তা নেই। আর সন্তান সন্ততি ও ভবিষ্যত বংশধরদের জন্য, তাদেরকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করা জরুরী। অর্থ সংগ্রহ বা সম্পদের পাহাড় তৈরী নই। তবুও অজানা মায়া, কামনা, বাসনা ও লোভের বশে আমরা সীমাহীন সম্পদ গড়ার প্রতিযোগীতায় লিপ্ত। স্বল্প দৈর্ঘ্য এক ছোট্ট জীবনের জন্য এটা বিলাসিতা ছাড়া আর কিছু নই।

Leave a Reply