দলনেতার নেতৃত্বের জন্য, সুবিধাজনক অবস্থান জরুরী!

দলনেতার নেতৃত্বের জন্য, সুবিধাজনক অবস্থান জরুরী!

দলনেতার নেতৃত্ব প্রদানের জন্য সুবিধাজনক অবস্থানে থাকা জরুরী। দলনেতার নেতৃত্ব প্রদান সাধারণত দলগত কাজের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হয়। নেতৃত্ব প্রদানের ক্ষেত্রে পেছন থেকে নেতৃত্ব দাও, এ কথাটির সাথে আমরা সবাই কম বেশী পরিচিত। অর্থাৎ বিভিন্ন ক্ষেত্রে হর হামেশা উপমা বা উদাহরণ হিসেবে এ বাক্য ব্যবহার হয়ে আসছে। এটি শুধুই প্রবাদ বাক্য নই, মুলত কৌশল পরিকল্পনা। দলনেতার নেতৃত্বের সাথে বিজয়ের গভীর অর্থ লুুুকিয়ে আছে।  প্রকৃত পক্ষে বা বাস্তব ক্ষেত্রে দলগত কাজে এর প্রয়োগ সব সময় যুক্তিযুক্ত প্রমাণিত হয়েছে।

দলনেতার নেতৃত্বের জন্য, সুবিধাজনক অবস্থান জরুরী!

জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত আমাদের চেষ্টা জীবন, জীবিকা ও ভালো থাকা নিয়ে। নিজের অস্তিত্ব টিকে রাখার জন্য আমরা সর্বদা সংগ্রাম করছি। এ সংগ্রামে কখনও একা আবার কখনও সম্মিলিত ভাবে সামিল হচ্ছি। একা সংগ্রাম, প্রতিযোগীতা বা যুদ্ধ করলে সেখানে দলনেতার দরকার নেই। তাই এখানে নেতৃত্ব নিয়ে কোন ঝামেলা নেই। এখানে আমি একাই রাজা, একাই প্রজা। সংগ্রাম, যুদ্ধ বা প্রতিযোগীতাও একান্ত ভাবে আমার একার। সুতরাং এ ক্ষেত্রে সুবিধা, অসুবিধা বা কৌশলগত অবস্থানের জন্য সিদ্ধান্ত নেয়ার সম্পুর্ণ স্বাধীনতা আমার আছে। উৎসাহ, উদ্দীপনা, উস্কানি বা ইন্ধন যোগানোর জন্য যারা আছে সঙ্গত কারণেই তারা মাঠের বাইরে। দলনেতার অবস্থানে নিতে হয় এমন কঠিন দায়িত্ব তাদের নেই।

দলনেতার নেতৃত্বের জন্য, সুবিধাজনক অবস্থান জরুরী!

দলনেতার নেতৃত্ব প্রদান সম্মিলিত কাজের প্রতীক। সংগ্রাম, যুদ্ধক্ষেত্র বা অন্য কোন গঠনমুলক কাজে দলনেতা বা নেতার একটি গ্রহণযোগ্য অবস্থানে থাকা একান্ত প্রয়োজন। কারণ সকল পরিকল্পনা, কলা কৌশল, পরামর্শ, সিদ্ধান্ত এবং বাস্তবায়নের রুপ রেখা তার নিকট হতে আসে। শুধু দলনেতার অস্তিত্ব ধ্বংস করে পুরো দলকে সিদ্ধান্তহীনতায় ফেলে দেয়া যায়। দলের কর্ম ক্ষমতাকে শুন্যের কোটায় নেমে আনতে হলে দলনেতার ক্ষতি করা অত্যন্ত জরুরী। এ ক্ষেত্রে দলনেতাকে ঘায়েল করাটাই প্রতিপক্ষের একমাত্র লক্ষ হিসেবে আসে। পেছন থেকে নেতৃত্ব দাও, এটা কথার কথা। আসলে দলনেতার এমন অবস্থানে যে থাকতে হবে এমন কোন যুক্তি নেই। পেছন বা সামনে নই, তার জন্য একটি নিরাপদ অবস্থান জরুরী।

দলনেতার নেতৃত্বের জন্য, সুবিধাজনক অবস্থান জরুরী!

একটি রাষ্ট্রের কথাতে আসি। সে দেশের প্রধানমন্ত্রী বা প্রেসিডেন্ট সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। তার রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য মাননীয় মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যগণ, বিভিন্ন মন্ত্রণালয় আছে। একই সাথে বিভিন্ন কর্মকর্তা, সরকারী ও বেসকারী সংস্থাও আছে। তিনি বিচক্ষণতা ও বুদ্ধি দিয়ে অত্যন্ত সুন্দর ভাবে দেশ পরিচালনা করছেন। এ ক্ষেত্রে তিনি সরাসরি কোন কায়িক পরিশ্রম করেন না। কিন্তু যখন যেখানে প্রয়োজন সঠিক আদেশ উপদেশ বা নির্দেশ প্রদান করছেন। ফলে দেশটি সার্বিক দিক থেকে ভালো ভাবে চলছে। এখন হঠাৎ করে তিনি মৃত্যুবরণ করলেন। দেশে শোকের ছায়া নেমে আসবে স্বাভাবিক। কিন্তু একই সাথে দেশটি সঠিক নির্দেশনা দেয়ার মত নেতা বা দলনেতার অভাবে পড়বে নিশ্চিত।

আমরা সবাই খেলা মাঠের বাহির থেকে পর্যবেক্ষণ করি। বাহির থেকে নির্দেশনা বা আদেশ উপদেশের বুলি দেয়া খুবই সহজ। কিন্তু খেলার মাঠে গেলে বোঝা যায়, আসলে কে কতোটা দক্ষ। সঠিক ভাবে দলকে পরিচালনা করা খুবই কঠিন কাজ। আপনি আমি মাঠের বাইরে থেকে অনেক বড় বড় উপদেশ দিতে পারি। কিন্তু এ সব আসল সময়ে কোন কাজেই আসে না। দলনেতাই সবার দক্ষতা এবং ক্ষমতা সম্পর্কে সঠিক ধারণা রাখেন। আপনি বা আমি নই। প্রতিপক্ষের সাথে মরণ পণ যুদ্ধ করে জয়ের মালা ছিনিয়ে আনা এতো সহজ নই। তাহলে তো আপনি আমি পুরস্কারের ভাড়ে চলতেই পারতাম না!

দলনেতার নেতৃত্ব প্রদানে, সব সময় সুবিধাজনক অবস্থানেই থাকা উচিত!

প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার দায়িত্ব দলনেতার। কোন খেলোয়াড়কে কোন জায়গায় রাখলে সেটা সহজ হবে দলনেতা তা ভালো জানেন। সুতরাং দলনেতার নির্দেশনা প্রদান করার মত সঠিক জায়গাতে থাকা জরুরী। পরিবারের ক্ষেত্রেও একজন কর্তা ব্যক্তি থাকেন। তিনিই পরিবারের সার্বিক দায়িত্ব পালন করেন। তিনিই পরিবারের ভালোর জন্য বা পরিবারের প্রতিটি সদস্যের মঙ্গলের জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেন। দরকারী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। নির্দেশ এবং সিদ্ধান্ত প্রদানের ক্ষেত্রে তিনি ভালো মন্দ সব দিক বিচার করেন। এমন পরিস্থতিতে তিনি সঠিক অবস্থানে আছেন। এমন যদি হয় তার উপস্থিতির সাথে একটা পরিবারের মা ও সবাইকে নির্দেশ দিচ্ছেন। এমন অবস্থায় পরিবার পরিচালনায় পারস্পারিক দ্বন্দ সৃষ্টি হবে।

দলনেতার নেতৃত্বের জন্য, সুবিধাজনক অবস্থান জরুরী!

দলনেতার বা নেতার সঠিক অবস্থান যুদ্ধক্ষেত্রে পরিকল্পনা করে নির্ধারণ করা হয়। সব সময়ই মাথায় রাখতে হয়, নেতা শুন্য দল যেন হাল ছাড়া নৌকা। যুদ্ধের সকল কুট কৌশল পক্ষের মত প্রতিপক্ষও ভালো করে জানে। নেতা, দলনেতা বা সেনাপতিকে ধ্বংস করতে পারা অর্থ বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে উপনিত হওয়া। তাই শত্রুপক্ষ সব সময়ই চেষ্টায় থাকে কিভাবে সেনাপতিকে ঘায়েল করা যায়। উভয় দলই ছল, বল এবং কৌশল প্রয়োগ করে। যাতে প্রতিপক্ষের সেনাপতিকে ধ্বংস করা যায়। আর তাই যুদ্ধক্ষেত্রে সেনাপতি বা দলনেতাকে সর্বোচ্চ গোপনীয়তা এবং সতর্কতা অবলম্বন করে সঠিক অবস্থানে রাখা হয়। যেখান থেকে তিনি সকল সহযোদ্ধাদের সঠিক নির্দেশনা দিতে পারেন।

আদিকাল হতে প্রতিপক্ষের সাথে সম্মুখ বা মুখোমুখি যুদ্ধ হয়ে আসছে। সাধারণত প্রতিপক্ষকে প্রতিরোধ করে পাল্টা আক্রমন করার দায়িত্ব দলের সামনের ভাগের মধ্যে পরে। তাই এমন স্থানে দলনেতার অবস্থান দলের জন্য বিরাট বিপদের সংকেতও বটে। কারণ শুধু মাত্র দলনেতাকে ঘায়েল করে দলকে নেতৃত্ব শুন্য বা কার্যত স্থবির করে দেয়া যায়। সুতরাং দলনেতার অবস্থান দলের সামনের ভাগে হওয়া সঠিক নই। আবার কৌশলগত অবস্থান হিসেবে প্রতিপক্ষ পেছন থেকেও আক্রমন করে বসতে পারে। দলের পিছনটায় সব সময়ই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দুর্বল থাকে বা অরক্ষিত থাকে। এমন অবস্থানও দলনেতার জন্য কোন ভাবেই নিরাপদ নই। তাই তার জন্য মজবুত, সুরক্ষিত ও যুক্তিযুক্ত অবস্থান নির্ধারণ আবশ্যক।

দলের সব দিকের নিরাপত্তা একমাত্র মধ্যস্থলেই প্রদান করা সম্ভব। সব দিক বিবেচনা করে দলনেতার, নেতা বা সেনাপতির দলের মধ্যখানে থাকা যুক্তি সঙ্গত। এর ফলে দলকে সার্বিক এবং সমান পর্যবেক্ষণ সম্ভব হয়। তেমনি অতি অল্প সময়ে পরিকল্পনা, কৌশল এবং সিদ্ধান্ত পাঠানো সম্ভব হয়। আবার দলের যদি বার বার আক্রমণের মুখে পড়ার বেশী সম্ভাবনা থাকে তবে দলনেতার পক্ষে তৎক্ষনাৎ নতুন কৌশল দেয়া সহজ হয়। মুল পরিচালনা শক্তিকে সঠিক ভাবে কাজে লাগাতে এমন কৌশলগত অবস্থান খুব কাজ দেয়। এমন অবস্থান থেকে পুরো দলকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। আবার প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেয়ার পথও খোলা থাকে। মাঝখানে অবস্থানই সার্বিক বিবেচনায় গ্রহণযোগ্য।

দলনেতার নেতৃত্বের জন্য, সুবিধাজনক অবস্থান জরুরী!

আপনি কি দাবা বা এ জাতীয় বুদ্ধির খেলা কখনও খেয়াল করেছেন! বাস্তবতা হিসাবে এটা একটা যুদ্ধ। দাবা খেলায় প্রথমেই মন্ত্রীকে একবার হারিয়ে দেখুন না কেন, পরিস্থিতি কেমন দুর্বল হয়। প্রতিপক্ষের কাছে টিকে থাকা বিশাল সংগ্রামের বিষয় হয়ে দাঁড়াবে। আর রাজা নেই তো দাবার বোর্ডে আপনি পরাজিত। এত সৈন্য ঘোড়া, হাতি, নৌকা কোন কাজেই আসবে না। সুতরাং শুধু অপরকে বুঝতে দেয়ার জন্য নই, আমার বা আমাদের সমষ্টির স্বার্থের জন্য। সকলের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য দলনেতা বা নেতাকে মধ্যখানে অথবা নিরাপদ স্থানে রাখা উচিত। যাতে তিনি জয়ের জন্য, আমাদের সঠিক ভাবে পরিচালনা করতে পারেন। এ কথা যুদ্ধসহ প্রতিটি সংগ্রামে সমান ভাবে প্রযোজ্য।

দলনেতার নেতৃত্বের জন্য, সুবিধাজনক অবস্থান জরুরী!

সব চেয়ে বড় কথা হলো, যে কারো উপরই যোগ্যতা এবং অভিজ্ঞার ভিত্তিতে বিশেষ কোন দায়িত্ব পরতে পারে। এটা দেশ পরিচালনা, যুদ্ধ, প্রতিযোগীতা বা এ রকম হাজারটা বিষয়ে হতে পারে। দলনেতার উপর যেহেতু নির্দিষ্ট বিষয়ে জয় পরাজয় বা সাফল্য লাভের বিষয়টি জড়িত। তাই তাকে একটি সুবিধাজনক অবস্থানে রাখা একান্ত প্রয়োজন। তা না হলে আশা করা ফলাফলের পরিবর্তে বিপরীত ফল আসতে পারে। অতএব নেতৃত্ব দিতে হলে পেছন থেকে নই, সুবিধাজনক অবস্থান হতে নেতৃত্ব দিতে হবে।

Leave a Reply