প্রয়োজন এবং প্রিয়জন এক নই!

প্রয়োজন এবং প্রিয়জন-এক নই!

প্রয়োজন এবং প্রিয়জন শব্দ দুটো খুব কাছাকাছি। মাঝে মাঝে গঠনের দিক থেকে প্রয়োজন এবং প্রিয়জন কিছুটা বিভ্রান্তির সৃষ্টি করে! সাদৃশ্যপুর্ণ এ শব্দ দুটো সম্পুর্ণ ভাবে আলাদা চাহিদা এবং ব্যক্তির সম্পর্কে বুঝায়।

প্রয়োজন এবং প্রিয়জন-এক নই!

প্রয়োজন সময়ের চাহিদা আর আমার একান্ত প্রিয় ব্যক্তিত্ব বা পছন্দের মানুষটিই প্রিয়জন। তিনি আমাকে, আমার কাজ কর্মকে মুল্য দেন। একই সাথে তিনি আমাকে ভালোবাসেন বা স্নেহও করেন। আবার আমিও তাকে ভালবাসি। প্রিয়জন যে কোন পরিস্থিতিতে জীবনে আসতে পারে। পারিবারিক, সামাজিক, বিয়ে, কাজ, চেনা জানা ইত্যাদি পরিস্থিতি অন্যতম ধরতে হয়। সব সময় প্রিয়জনের মুল্য আমাদের কাছে বেশী। মোট কথা হলো, প্রিয়জন আমাদের জীবনে আসা একটি বড় বিষয়। প্রিয়জন একই সাথে একাধিক ব্যক্তি হতে পারে না!

প্রয়োজন এবং প্রিয়জন  এক নই!

কখনও কখনও আমাদের জীবনে এমন পরিস্থিতি আসে, যেখানে বাধ্য হয়ে প্রয়োজন এর কাছে হার মানতে হয়। পরিস্থিতি এমনই গুরুতর, মনের বিরুদ্ধে আমাদের জীবন হতে প্রিয়জনের চ্যাপ্টারটা বাদ দিতে হয়। এ কথায় আপনারা অবাক হতে পারেন কিন্তু এটা ভুল নয়। জীবন ও প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মে আমরা বড় হই। উপার্জন করতে শিখলে, অভিভাবক বা বাবা মা আমাদের বিয়ে দেন। এতে আমাদের জীবনে সার্বিক ভারসম্য বজায় থাকে। নৈতিক অধঃপতন রোধে বিয়ের অবশ্যই প্রয়োজন আছে এবং সমস্যার শুরুও এখান থেকে।

প্রয়োজন এবং প্রিয়জন-এক নই!

অনেক ধরণের সম্পর্ক আমাদের বাস্তব জীবনে আছে। এ পৃথিবীতে মা বাবার মত নিবিড় ও একান্ত আপনজন কেউ নেই। মা বাবার সাথে সন্তানের যে সম্পর্ক তার সাথে অন্য কোন সম্পর্কের তুলনা করা যায় না। আমরা সন্তানেরা বিয়ের আগ পর্যন্ত এমন মধুর ও নিবিড় আত্মার বন্ধনকে খুবই মুল্য দিই। তারপর যেই বিয়ে হয়, তখন আমি বা আমরা অমানুষ হয়ে যাই। স্বার্থপর, মেরুদন্ডহীন এবং বউ এর হুকুমের গোলামে পরিণত হই। এই গোলাম হিসেবে আমরা শতকরা আশি জন এ দলে। বউ, তার কথা ও ইচ্ছা ছাড়া কিছু বুঝি না।

প্রয়োজন এবং প্রিয়জন-এক নই!

বিয়ের আগে আমাকে, সবাই বাবা মার উপযুক্ত সন্তান হিসেবে জানত। এখন বিয়ের পরে দেহের সুখে পাগল হয়ে গেছি। স্ত্রীর কথায় উঠি ও বসি। দু একটা ব্যতিক্রম বাদে আজ কাল বউরা তো শশুড় শাশুড়ীকে মানুষই মনে করে না। আপনি বা আমি বৃদ্ধ মা বাবা কে কিছু খাওয়াতে বা পরাতে গেলেও বউ এর হুকুম নিই। আমরা কাজের জন্য বেশীর ভাগ সময় বাড়ীর বাইরে থাকি। তাই মা বাবার প্রতি অবহেলা আমরা বুঝি না। এ সুযোগে আমাদের লক্ষ্মী বউ, মা বাবার প্রতি অবহেলা ও নিপীড়নের স্টীমরোলার চালায়।

প্রয়োজন এবং প্রিয়জন-এক নই!

চরম অবহেলা, অপমান ও অবজ্ঞার পরও বাবা মা, আমাদের কাছে ছেলের বউ এর নামে অভিযোগ করেন না। তারা সব সময়ই কামনা করেন, তাদের সন্তান যেন ভালো থাকে, সুখে থাকে। শিশুকাল থেকে যৌবন পর্যন্ত সময়ে প্রয়োজনে আমরা আমাদের প্রিয়জনের প্রতি ভালোবাসার প্রেক্ষাপট পরিবর্তন করেছি বহুবার। কিন্তু মা, বাবা আমাদের আগের মতই ভালোবাসেন। সন্তানের প্রতি তাদের ভালোবাসা এতোটুকু মলিন হয়নি। এখানে তারা বরাবরই প্রয়োজনের চেয়ে প্রিয়জন, সন্তানের চাহিদাকে প্রাধান্য দিয়েছেন। অথচ আমরা সুযোগ্য সন্তানেরা বউ এর খুশির জন্য বাবা মাকে ডাকি, বুড়া বুড়ি বলে। শশুড় শাশুড়ীকে ডাকছি আব্বা আম্মা বলে।

প্রয়োজন এবং প্রিয়জন  এক নই!

আমি বা আপনি আসলেই কি যোগ্য সন্তান। বাস্তবতা বলে, বাবা মা আমাদের মত অযোগ্য সন্তানকে পৃথিবীতে এনে মস্ত ভুল করেছেন। শতকরা আশিজন সন্তানের আবার অধিকাংশেরই ভাবোদয় হয় বয়স কালে। তারা বাবা মার করুণ পরিস্থিতিতে তখন খুব কষ্ট পান। কিন্তু পরিবারের আসল পরিস্থিতি বিচারে তাদের কিছুই করার বা বলার থাকে না। অবশেষে আপনার বা আমার একান্ত প্রিয়জন বাবা মা কে বউ এর ইচ্ছের প্রতিফলন স্বরুপ বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়ে দেই। উপরের পরিস্থিতিগুলো গভীর চিন্তার বিষয়! অবস্থা বিচারে প্রয়োজনের তাগিদে আপনি আপনার বাবা মা প্রিয়জনকে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়ে দিচ্ছেন। আপনারাই বলুন প্রয়োজনীয়তার কাছে কখনও কখনও প্রিয়জন হার মেনেছে কিনা!

প্রয়োজন এবং প্রিয়জন-এক নই!

প্রয়োজনের কাছে কখনও কখনও প্রিয়জন হার মানতে বাধ্য হয়। এখানে মেয়েদের কথা তোলা হয়নি। কারণ বউ হিসেবে তাদের ভুমিকা অন্য পরিবারে একই রকম। অনেকেরই ধারণা হতে পারে, এটা বুঝি মুগ্ধ হবার মত কোন প্রেম কাহিনী। আমি অত্যন্ত দুঃখিত আপনাদের হতাশ করার জন্য!

প্রয়োজন এবং প্রিয়জন-এক নই!

প্রয়োজন শব্দটি সময় এবং পরিস্থিতির বিচারে সৃষ্টি অথবা গৃহীত একটি পদক্ষেপ মাত্র। আমরা প্রত্যেকেই ইচ্ছা অথবা অনিচ্ছা যে কোন কারণেই হোক না কেন প্রয়োজনের শৃঙ্খলে বন্দী। অবাক বিষয়, এ আবার কেমন কথা? ধরুন, আজ বিকেলে হঠাৎ করে আকাশ মেঘ করে মুষল ধারে বৃষ্টি নেমেছে। এখনে নিজেকে বৃষ্টিতে ভেজা থেকে রক্ষার জন্য আপনার একটি ছাতার প্রয়োজন। আপনার ক্ষুধা পেয়েছে। হোটেল খুঁজে আপনার ক্ষুধা মেটানো প্রয়োজন। এটা বর্তমান সময়ের দাবী। সুতরাং আমরা সবাই সময়ের কাছে বা সময়ের হাতের এক একটা খেলনা মাত্র।

প্রকৃত পক্ষে আমাদের ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, ধর্মীয়, রাষ্ট্রীয়, জাতিগত বা বৈশ্বিক পর্যায়ের সব চাহিদাগুলোই সময়ের প্রয়োজন মাত্র। তবে এ প্রয়োজনীয়তা গুলোর কোনটা সার্বজনীন, কোনটা মানবতার পরিপন্থী অথবা কখনও কখনও নিরপেক্ষতাকে বুঝায়। আমাদের সবারই উচিত মানবতা পরিপন্থী প্রয়োজন গুলো সযত্নে পরিহার করা। ব্যক্তিগত মহৎ উদ্যোগই বৃহৎ পরিসরে মঙ্গল সাধনের প্রাথমিক ধাপ এবং বহুবিধ জটিলতা নিরসনের একমাত্র চাবি কাঠি হিসেবে প্রমানিত।

প্রিয়জনকে আর দশ জনের মত প্রয়োজনে ব্যবহার করা যায়। কিন্তু ব্যক্তি বিশেষে কেউ কেউ প্রয়োজনে ব্যবহৃত হলেও তার আর প্রিয়জন হয়ে ওঠার সুযোগ হয় না। কারণ এ বিশেষণটা হয়তো ইতিমধ্যেই অন্য কেউ অর্জন করেছে। সুতরাং আপনি যদি বোঝেন কারও কাছে আপনার প্রয়োজনীয়তা একান্ত ভাবেই নেই। তবে সে ক্ষেত্রে বোকার মত আপনাকে তার প্রিয়জন ভেবে কষ্ট পাবেন না। কারণ কারও কারও অন্য রকম প্রয়োজনীয়তাটা আপনি হয়তো পূরণ করতে পারবেন না। সুতরাং একটি বদ্ধমুল ধারণাকে আঁকড়ে ধরে না থেকে বরং একলা চলার নীতি অনুসরণ করুন। দেখবেন নিজের ভারাক্রান্ত হৃদয়ের ভার অনেকটা হালকা হয়ে গিয়েছে।

মানুষ হিসেবে কারও কাছে আপনার প্রয়োজনীয়তা কতটুকু তা মুল্যায়নের এবং বোঝার সব চেয়ে সহজ সুত্র আছে। তা হলো, আপনার জন্য তার বরাদ্দকৃত সময়টা ধীরে ধীরে কমে আসবে। আর তার সাথে সাথে আপনার জন্য তার মনের জানালাও বন্ধ হবে। এমন পরিস্থিতিতে দ্রুত, দৃঢ় মনোবল এবং ব্যক্তিত্ব নিয়ে সড়ে পড়ুন।

সুতরাং প্রয়োজন এবং প্রিয়জন শব্দ দুটোতে বানানগত দিক থেকে অনেকটা সাদৃশ্য থাকলেও অর্থগত দিক থেকে কোন ভাবেই এক নই। জীবনে চলার পথে যারা এটা অনুধাবণ, অনুসরণ করতে পেরেছেন তারাই সফল এবং সুখী। তবে আপনার প্রয়োজনীয়তাটা যেন সব সময় সার্বজনীন হয় এটা একান্ত কাম্য। এ ক্ষেত্রে আপনি কারও প্রিয়জন হিসেবে থাকবেন কি না এতে কিচ্ছু আসে যায় না।

Leave a Reply